ক্রিকেটে অনেক সময় আমরা এমন কিছু অবিশ্বাস্য ইনিংস দেখতে পাই যা একাই ম্যাচের রূপ পাল্টে দিতে পারে। কিন্তু খেলার নিয়ম এবং ভাগ্যের অদলবদলে, কিছু কিছু সময় এমনও হয় যখন একজন ব্যাটসম্যান অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স করেও দলকে জিততে দিতে পারেন না। আজ আমরা কথা বলব সেই শীর্ষ ৫টি ODI ম্যাচ যেখানে একজন খেলোয়াড় ১৫০+ রান করেছে কিন্তু দল হেরেছে। প্রতিটি ঘটনাই ক্রিকেট ইতিহাসে আলাদা দাগ কেটে গেছে।
5. ইভিন লুইস – 176* বনাম ইংল্যান্ড (২০১৭)

ইভিন লুইস ছিলেন একটি অসাধারণ ফর্মে, যখন ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে একটি রেইন-আফেক্টেড ম্যাচে ১৭৬* রানে অপরাজিত ছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য তার এই ইনিংস ছিল অনেক আশা জাগানো। লুইস ঝড়ো ছন্দে খেলছিলেন এবং তার দাপটপূর্ণ ব্যাটিংয়ের মাধ্যমে দলকে একটি ভালো স্কোরে পৌঁছাতে সাহায্য করেছিলেন। তিনি ১৩০ বলে ১৭টি চার ও ৭টি ছক্কা মেরেছেন, যা তার আক্রমণাত্মক ব্যাটিং স্টাইলকে তুলে ধরে। তার একক পারফরম্যান্সে মনে হচ্ছিল, ওয়েস্ট ইন্ডিজ জয়ের পথে আছে। তবে ইংল্যান্ডের বোলারদের কঠিন প্রতিবাদ এবং রেইন-আফেক্টেড টার্গেটের (DLS মেথড) কারণে, দলটি শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি হারায়।
ODI ম্যাচ যেখানে একজন খেলোয়াড় ১৫০+ রান করেছে কিন্তু দল হেরেছে- এর মধ্যে এই ম্যাচটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ। কারণ লুইসের একক আত্মবিশ্বাসী ইনিংস সত্ত্বেও পুরো দল তার পাশে দাঁড়াতে পারেনি। দলের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরা যথেষ্ট রান করতে পারেনি, যা ইংল্যান্ডকে ম্যাচ সহজেই জেতার সুযোগ করে দিয়েছে।
এই ম্যাচ থেকে বোঝা যায়, ক্রিকেটে একক ব্যক্তির পারফরম্যান্স যতই দুর্দান্ত হোক না কেন, পুরো দলকে জিতাতে হলে সবাইকে ভালো খেলতে হয়। লুইসের এই ইনিংস এতটাই দারুণ ছিল যে তা এখনও অনেক ক্রিকেটপ্রেমীর মনে গেঁথে রয়েছে। তবে, একই সাথে এটি মনে করিয়ে দেয় যে ODI ম্যাচ যেখানে একজন খেলোয়াড় ১৫০+ রান করেছে কিন্তু দল হেরেছে- এর মতো পরিস্থিতি খুবই হতাশাজনক হতে পারে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের তরুণ ব্যাটসম্যানদের জন্য এটি এক ধরনের শিক্ষা হয়ে দাঁড়ায় যে বড় রান করলেও দলের পক্ষে সহায়ক হতে অন্যদেরও অবশ্যই দায়িত্ব নিতে হবে। লুইসের এই ইনিংসের মাধ্যমে ক্রিকেটের সেই অস্পষ্ট দিকটি প্রকাশ পায় যেখানে ব্যাক্তিগত সাফল্য দলীয় জয়ের সাথে মিলিত হয় না। এমন পরিস্থিতিতে, ক্রিকেটারদের মনে রাখতে হয় যে দলীয় ঐক্য এবং সমর্থন ছাড়া বড় ব্যক্তিগত অর্জনও মর্যাদা পায় না।
সার্বিকভাবে, ইভিন লুইসের এই ১৭৬* রান একটি দুর্দান্ত আত্মপ্রকাশ ছিল যা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের ইতিহাসে স্মরণীয় থাকবে। কিন্তু ODI ম্যাচ যেখানে একজন খেলোয়াড় ১৫০+ রান করেছে কিন্তু দল হেরেছে- এমন কিছু ঘটনা ক্রিকেটের প্রতিটি প্রেমিকের মনে বিশেষ স্থান রাখে।
Stat Table:
Player | Runs | Balls | Opposition | Year | Result |
---|---|---|---|---|---|
Evin Lewis | 176* | 130 | England | 2017 | England won |
4. ডেভিড ওয়ার্নার – 173 বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা (২০১৬)

ডেভিড ওয়ার্নারের ২০১৬ সালের দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে কেপটাউনের মাঠে ১৭৩ রান একটি বিস্ফোরক ইনিংস ছিল। মাত্র ১৩৬ বল খেলে তার এই ইনিংসটি ছিল তার ব্যাটিং ক্ষমতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। ওয়ার্নারের আক্রমণাত্মক স্টাইল এবং বাউন্ডারির প্রতি মনোযোগ তার ইনিংসকে প্রাণবন্ত করে তুলেছিল। ২৪টি চার এবং ১টি ছক্কা মেরে তিনি পুরো স্টেডিয়াম মাতিয়েছিলেন।
তবে ODI ম্যাচ যেখানে একজন খেলোয়াড় ১৫০+ রান করেছে কিন্তু দল হেরেছে- এর শ্রেণিতে এই ম্যাচটিও পড়ে। কারণ তার দল, অস্ট্রেলিয়া, শেষ পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার চাপে পড়ে এবং ম্যাচ হারতে হয়। ওয়ার্নারের ইনিংসের বিপরীতে দলের অন্য ব্যাটসম্যানরা ভালো পারফরম্যান্স দিতে পারেনি। বিশেষ করে মিডল অর্ডার এবং লোয়ার অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা যথেষ্ট রান সংগ্রহ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন।
এই ম্যাচ থেকে বোঝা যায়, ক্রিকেটে শুধু একজন খেলোয়াড়ের ব্যাটিং দক্ষতা যথেষ্ট নয়, পুরো দলের সমন্বিত পারফরম্যান্স প্রয়োজন। ওয়ার্নারের এই ইনিংস তার দলের জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না। ODI ম্যাচ যেখানে একজন খেলোয়াড় ১৫০+ রান করেছে কিন্তু দল হেরেছে- এই ধরনের ঘটনা ক্রিকেটের অপ্রত্যাশিত মোড়গুলোর মধ্যে একটি।
ওয়ার্নারের ইনিংসটি তাঁর ব্যক্তিগত ক্যারিয়ারের একটি শীর্ষ পর্যায় হিসেবে বিবেচিত হলেও, দলের অসামঞ্জস্যপূর্ণ পারফরম্যান্সের কারণে এই দুর্দান্ত ইনিংসের স্বাদ ম্লান হয়ে যায়। এই ম্যাচটি ব্যাখ্যা করে যে একটি দলগত খেলা হওয়ায়, ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের পাশাপাশি অন্যদেরও অবদান অপরিহার্য।
সুতরাং, ওয়ার্নারের এই ইনিংস যেমন প্রশংসার যোগ্য, তেমনি তা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে ক্রিকেটে একক ব্যাটসম্যানের সাফল্য সবসময় দলকে জয়ী করতে পারে না। ODI ম্যাচ যেখানে একজন খেলোয়াড় ১৫০+ রান করেছে কিন্তু দল হেরেছে- এমন অনেক স্মরণীয় ঘটনা আমাদের ক্রিকেট ইতিহাসে পাওয়া যায় এবং এই ম্যাচ তার অন্যতম।
Stat Table:
Player | Runs | Balls | Opposition | Year | Result |
---|---|---|---|---|---|
David Warner | 173 | 136 | South Africa | 2016 | South Africa won |
Also Read:
- শীর্ষ ৫ জনপ্রিয় ভারতীয় ক্রিকেটার যারা বলিউড ছবিতে অভিনয় করেছেন
- শীর্ষ 10 ব্যাটসম্যান যারা এক ক্যালেন্ডার বছরে T20 ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন
3. শচীন তেন্ডুলকর – 175 বনাম অস্ট্রেলিয়া (২০০৯)

সচিন তেন্ডুলকর যখন ২০০৯ সালের হায়দরাবাদে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ১৭৫ রান করেন, তখন ভারতীয় ক্রিকেট ভক্তরা বড় আশা করেছিলেন। ভারতকে ৩৫১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে হয়েছিল, যা সহজ ছিল না। তেন্ডুলকরের ইনিংস ছিল পরিপূর্ণ, তার ১৯টি চার ও ৪টি ছক্কায় তিনি যেন ক্রিকেটের এক অন্য মাত্রা দেখিয়েছিলেন।
কিন্তু ODI ম্যাচ যেখানে একজন খেলোয়াড় ১৫০+ রান করেছে কিন্তু দল হেরেছে- এই ক্ষেত্রে এই ম্যাচ একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা। কারণ, শেষ মুহূর্তে ভারতের ব্যাটসম্যানরা চাপ সামলাতে পারেনি এবং অস্ট্রেলিয়া জয়লাভ করে। তেন্ডুলকরের এত বড় ইনিংস থাকা সত্ত্বেও দল হারায়, যা ক্রিকেটের অনিশ্চয়তা ও দলগত কৌশলের গুরুত্ব তুলে ধরে।
এই ম্যাচটি প্রমাণ করে যে বড় রান করলেও সমগ্র দলের কার্যকারিতা যদি ভালো না হয়, তাহলে জয় পেতে অসুবিধা হয়। তেন্ডুলকরের ইনিংস দেখায় ব্যক্তিগত দক্ষতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ হলেও দলগত সমর্থনের অভাব বড় সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। ODI ম্যাচ যেখানে একজন খেলোয়াড় ১৫০+ রান করেছে কিন্তু দল হেরেছে- এর মধ্যে এই ঘটনা অন্যতম।
এমন ঘটনা ক্রিকেট প্রেমীদের জন্য একটি গঠনমূলক শিক্ষা, যা বোঝায় একক পারফরম্যান্স যথেষ্ট নয়, পুরো দলের সামঞ্জস্যপূর্ণ চেষ্টা জরুরি। তেন্ডুলকরের এই ইনিংস এখনও অনেকের মনে জীবন্ত এবং তিনি একজন ক্রিকেট কিংবদন্তি হিসাবে থাকবেন।
Stat Table:
Player | Runs | Balls | Opposition | Year | Result |
---|---|---|---|---|---|
Sachin Tendulkar | 175 | 141 | Australia | 2009 | Australia won |
2. ফখর জামান – 193 বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা (২০২১)

২০২১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ফখর জামানের ১৯৩ রান একটি অসাধারণ একক প্রদর্শনী ছিল। এই ইনিংসটি পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানের সাহসিকতা ও দক্ষতার পরিচয় দেয়। দুর্দান্ত ফিটনেস ও ঝুঁকি নিয়ে খেলার মাধ্যমে তিনি দলকে একটি শক্ত অবস্থানে নিয়ে আসেন। তবে ODI ম্যাচ যেখানে একজন খেলোয়াড় ১৫০+ রান করেছে কিন্তু দল হেরেছে- এই ম্যাচও সে দলে পড়ে। কারণ পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত লক্ষ্য তাড়া করতে পারেনি এবং দক্ষিণ আফ্রিকা জয়ী হয়।
ফখর জামানের ইনিংস ছিল মেজাজী এবং আত্মবিশ্বাসী, কিন্তু দলের অন্যান্য সদস্যরা তাকে পর্যাপ্ত সমর্থন দিতে পারেননি। একটি বিতর্কিত রান আউট ও মিডল অর্ডারের দুর্বলতা পাকিস্তানের জয়ের স্বপ্নকে ভেঙে দেয়। ODI ম্যাচ যেখানে একজন খেলোয়াড় ১৫০+ রান করেছে কিন্তু দল হেরেছে- এর একটি তাজা উদাহরণ এই ম্যাচ।
এই ইনিংস থেকে বোঝা যায় যে ব্যাটসম্যানের একক পারফরম্যান্স ছাড়াও পুরো দলের সামঞ্জস্যপূর্ণ খেলা অপরিহার্য। ক্রিকেটের এই রকম ঘটনা আমাদের শেখায়, খেলায় সমগ্র দলের সহযোগিতা এবং মনোবল কতোটা গুরুত্বপূর্ণ।
Stat Table:
Player | Runs | Balls | Opposition | Year | Result |
---|---|---|---|---|---|
Fakhar Zaman | 193 | 155 | South Africa | 2021 | South Africa won |
1. চার্লস কোভেন্ট্রি – 194* বনাম বাংলাদেশ (২০০৯)

চার্লস কোভেন্ট্রির ২০০৯ সালের বাংলাদেশ-বিরুদ্ধ ১৯৪* রানের ইনিংস ODI ইতিহাসে অন্যতম চমকপ্রদ ঘটনা। তার এই অপরাজিত ইনিংসটি সাঈদ আনাারের সর্বোচ্চ স্কোরের সমান ছিল এবং তিনি পুরো ইনিংস জুড়ে দলের আশা হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু ODI ম্যাচ যেখানে একজন খেলোয়াড় ১৫০+ রান করেছে কিন্তু দল হেরেছে- এর শ্রেষ্ঠ উদাহরণ এই ম্যাচ।
জিম্বাবুয়ের মোট স্কোর ছিল ৩১২, যা প্রতিপক্ষ বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জ করার মতো ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ দুর্দান্ত ব্যাটিং করে এই লক্ষ্য তাড়া করে নেয়। কোভেন্ট্রির ব্যক্তিগত দক্ষতা দলের জন্য যথেষ্ট ছিল না।
এই ইনিংসটি প্রমাণ করে যে ক্রিকেটে কখনো কখনো একজন ব্যাটসম্যানের অসাধারণ সাফল্য দলীয় জয়ের গ্যারান্টি দিতে পারে না। ODI ম্যাচ যেখানে একজন খেলোয়াড় ১৫০+ রান করেছে কিন্তু দল হেরেছে– এমন ঘটনা ক্রিকেটকে আরও রোমাঞ্চকর করে তোলে এবং এই ম্যাচ তার জীবন্ত উদাহরণ।
Stat Table:
Player | Runs | Balls | Opposition | Year | Result |
---|---|---|---|---|---|
Charles Coventry | 194* | 156 | Bangladesh | 2009 | Bangladesh won |
ফ্রিকোয়েন্টলি আস্কড কোয়েশ্চনস (FAQs)
১. একজন খেলোয়াড় ১৫০+ রান করেও কেন দল হেরে যায়?
> একজন ব্যাটসম্যানের পারফরম্যান্স চমৎকার হলেও পুরো দল যদি ব্যাটিং বা বোলিং বিভাগে ব্যর্থ হয়, তাহলে দল হেরে যেতে পারে। ক্রিকেট একটি দলগত খেলা এবং সমন্বয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
২. কি কারণে ODI ম্যাচে ১৫০+ রানের ইনিংস থাকা সত্ত্বেও দল হেরে যায়?
> সাধারণত দলের অন্য ব্যাটসম্যানদের পারফরম্যান্স দুর্বল হওয়া, বোলারদের দুর্বলতা, ফিল্ডিংয়ে ভুল অথবা প্রতিপক্ষের আক্রমণাত্মক ব্যাটিং জয়ের প্রধান কারণ হতে পারে।
৩. এই রেকর্ডগুলো কিভাবে ক্রিকেট ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ?
> এসব রেকর্ড দেখায় যে ব্যক্তিগত মাইলফলক অর্জন সবসময় দলের জয়ের গ্যারান্টি নয়। এগুলো খেলোয়াড়ের দক্ষতা ও ধৈর্যের প্রমাণ।
৪. ভবিষ্যতে কি একক ব্যাটসম্যানের বড় স্কোর নিয়ে দল জিততে পারে?
> অবশ্যই পারে, কিন্তু সেটি দলের অন্যান্য সদস্যদের সহযোগিতার ওপর নির্ভর করে। বড় ইনিংসের পাশাপাশি পুরো দলের সুষম পারফরম্যান্স দরকার।